ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

সৈকতের ঝাউবীথিতে রাখাইনদের বর্ষা উৎসব শুরু

এম.এ আজিজ রাসেল ::  কক্সবাজার সৈকতের ঝাউবীথির বালিয়াড়িতে শুরু হয়েছে রাখাইনদের সম্প্রদায়ের বর্ণিল বর্ষা উৎসব। শুক্রবার শৈবাল পয়েন্টে শুরু হওয়া এই উৎসব আগামী ২ মাস পর্যন্ত চলবে। প্রতি শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা অবদি তরুণ—তরুণী, আবাল বৃদ্ধাবণিতার মহামিলন মেলা বসবে এখানে। তবে করোনার কারণে আসছে না টেকনাফ, চকরিয়া, হারবাং, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, মহেশখালীসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাখাইন তরুণ—তরুণীরা। এবার সীমিত পরিসরে এই উৎসব পালন হচ্ছে।

শুক্রবার দুপুরে সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রসৈকতে বৃষ্টিতে ভিজে আনন্দে মেতে উঠলেন খন্ড খন্ড রাখাইন তরুণ—তরুণীর দল। দিনভর চলল আড্ডা, গান, নাচ ও খাওয়া—দাওয়া। উপলক্ষটা ছিল ‘বর্ষা উৎসব’। শহরের বার্মিজ স্কুল এলাকা থেকে সৈকতে পরিবার পরিজন নিয়ে আসে ফ্রু ফ্রু ছেন। সাথে নিয়ে আসে বাড়িতে রান্না করা রকমারি খাবার—দাবার। সৈকতের ঝাউবাগানে করা হয় খানাপিনার আয়োজন। খাওয়া—দাওয়ার পর্ব শেষে শুরু হয় বৃষ্টিতে ভেজার পর্ব। পাশাপাশি উদ্দাম, উচ্ছল নাচ—গানে মেতে ওঠেন তাঁরা। বৃষ্টি যাঁদের মন ভেজাতে পারেনি তাঁরা নেমেছিলেন সাগরেও। উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে যেন আনন্দে ভেসে যাওয়ার পালা।

জানা গেছে, প্রতি বছর বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান তিন মাসব্যাপী আষাঢ়ী পূর্ণিমার আগে (আষাড়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত) সৈকতে এ উৎসব পালন করে থাকে রাখাইন সম্প্রদায়। এটি কোন ধর্মী উৎসব নয়। শুধুমাত্র সামাজিকভাবে পরিবার পরিজন ও বন্ধু—বান্ধব মিলে মিশে খানিক বর্ণিল সময় কাটানোর জন্য এই আয়োজন। সাথে আহবান করা হয় বর্ষাকে।

রাখাইন কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বর্ষা উৎসবে দুই মাসব্যাপী চলে অন্যরকম আনন্দ। এখানে আনন্দ, হাসি ও আর গানে মেতে ওঠে সবাই। উৎসবটা যেহেতু তারুণ্য নির্ভর, তাই উচ্ছ্বাসও চোখে পড়ে বেশি। দিন দিনই বাড়ছে এই উৎসবের জনপ্রিয়তা।

উৎসবে যোগ দেওয়া এক তরুণী বলেন, ‘এই উৎসব কেবল কক্সবাজার সৈকতেই হয়। সৈকতে সবাই মিলে নাচ—গানে মেতে উঠতে ভীষণ ভালো লাগে। তরুণদের কাছে এই দিনটির তাৎপর্যই আলাদা। অনেকে সারা বছর দিনটির জন্য অপেক্ষা করেন।’

কক্সবাজার কেজি স্কুলের শিক্ষিকা মাউন টিন জানান, প্রায় শতাব্দীকাল ধরে রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসব পালন করে আসছে। এক সময় হিমছড়ির অরণ্যে এ উৎসব উদযাপন করা হতো। সেখানে রাখাইন সমাজের পরিবার, বন্ধু মহল ও আত্মীয়—স্বজন গ্রুপ ভিত্তিক নানা রকমের খাবার নিয়ে চলে আসে এখানে। গত কয়েক বছর থেকে সমুদ্র আর প্রকৃতিকে আরও নিবিড়ভাবে কাছে পেতে সৈকতের ঝাউবাগানে পালন করা হচ্ছে মন রাঙানো এই বর্ষা উৎসব।

পাঠকের মতামত: